
রক্তের অ্যালার্জি বলতে অনেক সময় দু’ধরনের অবস্থা বোঝানো হয়ে থাকে — এক হলো রক্ত পরীক্ষায় অ্যালার্জির প্রবণতা ধরা পড়া (রক্তে IgE অ্যান্টিবডি বেড়ে যাওয়া) এবং অন্যটি হলো রক্ত দেওয়ার সময় শরীরের রিঅ্যাকশন হওয়া (blood transfusion reaction)। যেকোনো ধরনের অ্যালার্জির পেছনে সাধারণত ইমিউন সিস্টেমের অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া বা সঠিক ম্যাচিং না হওয়াই প্রধান কারণ।
রক্তের অ্যালার্জির সাধারণ লক্ষণ
- ত্বকে চুলকানি বা ফুসকুড়ি
- হাঁচি, কাশি বা নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া
- চোখ লাল হওয়া বা পানি পড়া
- শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি আকস্মিক বেড়ে যাওয়া
- রক্ত দেওয়ার সময় হঠাৎ জ্বর, শীতশীত লাগা বা শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে তা গুরুতর লক্ষণ।
আরো পড়ুনঃ কে কাকে রক্ত দিতে পারবে
রক্তের এলার্জি দূর করার উপায়
রক্তের অ্যালার্জি পুরোপুরি বিলোপ করা সব সময় সম্ভব না-ও হতে পারে, তবে নিয়মিত কেয়ার এবং সঠিক চিকিৎসা-ব্যবস্থায় এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। নিচে কার্যকর কিছু পদ্ধতি দেয়া হলো:
১. অ্যালার্জির উৎস চিহ্নিত করুন
যদি শরীরে নিয়মিত অ্যালার্জির লক্ষণ থাকে, তবে ডাক্তারের কাছে গিয়ে Allergy profile বা IgE টেস্ট করান। এতে বোঝা যাবে কোন কারণে আপনার শরীর টান পায় এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
২. অ্যালার্জি-সৃষ্টিকারী জিনিস এড়িয়ে চলুন
ধুলো, ধোঁয়া, পরাগরেণু, অথবা যে খাবারে সমস্যা হয় তা থেকে দূরে থাকুন। খাদ্যগত অ্যালার্জি থাকলে সেই খাবার সম্পূর্ণভাবে বাদ দিন। ওষুধে সমস্যা থাকলে ডাক্তারকে জানাতে ভুলবেন না।
৩. ওষুধ ও চিকিৎসা
চিকিৎসকের পরামর্শমতো অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধ, ইনহেলার বা অন্য কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা গ্রহণ করুন। রক্ত দেওয়ার আগে পার্সিস্টিং অ্যালার্জি থাকলে চিকিৎসককে জানালে প্রয়োজনীয় প্রি-মেডিকেশন বা পর্যবেক্ষণ করা হয়।
৪. রক্ত দেওয়ার সময় সঠিক মিল নিশ্চিত করুন
রক্ত গ্রহণের পূর্বে রক্তের গ্রুপ সঠিকভাবে মিলিয়ে নিন ও প্রয়োজনে রক্তব্যাংক থেকে ভেরিফাইড এবং স্ক্রিনড রক্ত নিন। পূর্বে transfusion reaction এর ইতিহাস থাকলে সেটাও মেডিক্যাল রেকর্ডে যুক্ত রাখুন।
৫. জীবনযাত্রার পরিবর্তন
পর্যাপ্ত ঘুম, সুষম খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম এবং পরিবেশগত পরিচ্ছন্নতা (বেডশিট, পর্দা, ফিল্টারিং) অ্যালার্জি কমাতে সহায়ক। ধূমপান ও অতিরিক্ত প্রসেসড খাবার এড়িয়ে চলুন।
ঘরোয়া উপায় (সহায়ক)
ঘরোয়া উপায়গুলো চিকিৎসার সম্পূরক হিসেবে ব্যবহার করা যায় —
- মধু ও আদা: প্রাকৃতিকভাবে কাশি ও হালকা অ্যালার্জি উপশমে সহায়ক।
- হলুদ দুধ: অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যের জন্য উপকারী হতে পারে।
- তুলসী চা: শ্বাসযন্ত্রের আরাম দেয় এবং কাশি কমায়।
তবে যে কোনো ঘরোয়া পদ্ধতি ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ প্রতিস্থাপন করবে না।
কবে ডাক্তারের কাছে যাবেন?
নিম্নলিখিত পরিস্থিতিতে অবিলম্বে চিকিৎসা নিন:
- শ্বাসকষ্ট, বুক ধড়ফড় বা অজ্ঞান হওয়ার মতো গুরুতর লক্ষণ দেখা দিলে।
- রক্ত দেওয়ার সময় হঠাৎ জ্বর, শীত-শীত লাগা বা মারাত্মক ফুসকুড়ি দেখা দিলে।
- দীর্ঘ সময় ধরে অ্যালার্জি কমছে না বা খারাপ হচ্ছে।