প্রিয় পাঠক, আপনি কি পার্সিমন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা, পার্সিমন ফল পার্সিমন ফলের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানতে চান। তাহলে সম্পূর্ণ পোস্ট পড়ুন।
পার্সিমন একটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় ফল। এটি দেখতে টমেটোর মতো। পার্সিমনের বৈজ্ঞানিক নাম হল Diospyros kaki, এবং এটি Ebenaceae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। সাধারণত জাপান, চীন, কোরিয়া, ব্রাজিল, ইতালি এবং তুরস্কের মতো দেশে প্রচুর চাষ করা হয়। তবে সর্বোচ্চ উৎপাদন হয় চীনে।
পার্সিমনের প্রায় ৪০০ এর বেশি প্রজাতি আছে, আপনি কি জানেন? এটি বিশ্বের পঞ্চম দ্রুত উন্নয়নশীল ফসল। পার্সিমন ফল স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। বাংলাদেশে এই ফলকে অনেকে গাব ফল নামে চিনে।
পার্সিমন ফলের পুষ্টিগুণ
এই ফলের মধ্যে ক্যারোটিনয়েড, টোকোফেরল, ফ্ল্যাভোনয়েড, ট্যানিন, ফেনোলিক এসিড, পলিফেনল এবং আরও অনেক কিছু উপকারী উপাদান রয়েছে। পার্সিমন ফলের নিম্নলিখিত পুষ্টিগুণ রয়েছে :
- জল – ৬৪.৪ গ্রাম
- শক্তি – ১২৭ কিলো-ক্যালরি
- কার্বোহাইড্রেট – ৩৩.৫ গ্রাম
- চর্বি – ০.৪ গ্রাম
- প্রোটিন – ০.৮ গ্রাম
- ফসফরাস – ২৬ মিলিগ্রাম
- সোডিয়াম – ১ মিলিগ্রাম
- ক্যালসিয়াম – ২৭ মিলিগ্রাম
- আয়রন – ২.৫ মিলিগ্রাম
- পটাশিয়াম – ৩১০ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন সি (অ্যাসকরবিক এসিড) – ৬৬ মিলিগ্রাম
- গ্লুটামিক এসিড – ০.১০৪ গ্রাম
পার্সিমন ফলের উপকারিতা
হার্টের জন্য পার্সিমন
কোলেস্টেরল কমাতে পার্সিমন
পার্সিমন ফলের আঁশ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। ২০০০ সালে ইঁদুরের উপর গবেষণা করে দেখা গেছে যে, পার্সিমন ফল খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা এবং ট্রাইগ্লিসারাইড কমাতে পারে। তবে কোলেস্টেরলের মাত্রা অস্বাভাবিক হলে আপনাকে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে।
ডায়াবেটিসের জন্য পার্সিমন
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য পার্সিমন ফলের অনেক উপকারিতা রয়েছে। এটি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা হ্রাস করে। এটি কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পর গ্লুকোজের দ্রুত শোষণকে বাধা দেয়, যা রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধিতে বাধা দিতে পারে। যাইহোক, ডায়াবেটিসের মাত্রা অস্বাভাবিক থাকলে আপনার রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করা এবং ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ক্যান্সার নিরাময়ে পার্সিমন
২০১১ সালে গবেষণায় দেখা গেছে যে, পার্সিমন ফল ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিকে বাধা দিতে পারে। পার্সিমন ফলের ক্যারোটিনয়েড এবং ক্যাটেচিনের মতো বায়োঅ্যাকটিভ যৌগগুলি প্রোস্টেট, ওড়াল এবং ব্লাড ক্যান্সারের জন্য উপকারী হতে পারে। ক্যান্সার একটি বিপজ্জনক রোগ, তাই শুধু পার্সিমন ফলের উপর নির্ভর করলেই হবে না। আপনাকে অবশ্যই সঠিক চিকিৎসা নিতে হবে।
ত্বকের যত্নে পার্সিমন
পার্সিমন পাতার নির্যাস একজিমা (ত্বকের প্রদাহ) এবং ব্রণের মতো ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার জন্য উপকারী। এটি রোদে পোড়ার হাত থেকে রক্ষা করে। কেননা এতে রয়েছে ফ্ল্যাভোনয়েড, ক্যাটেচিন, বিটা ক্যারোটিন, জৈব এসিড এবং ভিটামিন B1, B2, C এবং K এর মতো যৌগগুলি।
ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ প্রতিরোধ পার্সিমন
২০১৭ সালে এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, পার্সিমনে উপস্থিত ট্যানিন গুলি মাইকোব্যাক্টেরিয়াম প্রজাতির মতো ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে। যা ফুসফুসের সংক্রমণ হতে রক্ষা করে।
আরো পড়ুন:পিচ ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা
চোখের যত্নে পার্সিমন
এক গবেষণায় দেখা গেছে লুটেইন পার্সিমনের একটি বায়োঅ্যাকটিভ যৌগ। যা চোখের ম্যাকুলা অংশকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারে। ম্যাকুলা হল চোখের রেটিনার পিছনে একটি হলুদ দাগ, যা কেন্দ্রীয় দৃষ্টিশক্তির জন্য দায়ী। এই ফলে রয়েছে ভিটামিন এ যা চোখের জন্য উপকারী।
পার্সিমন ফলের অপকারিতা
পার্সিমন ফল কোন গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি করে বলে জানা যায়নি। তবে অতিরিক্ত পার্সিমন ফল খাওয়ার কারণে নিম্নলিখিত পার্সিমন ফলের অপকারিতা গুলো লক্ষ্য করা যায় :
- ত্বকে চুলকানি হতে পারে।
- ত্বকের উপর ফোলা বা লাল-ভাব হতে পারে।
- অতিরিক্ত পার্সিমন ফল খাওয়া হাঁপানির কারণ হতে পারে।
- আপনি মাথা ঘোরা অনুভব করতে পারেন।
- বমি বমি ভাব হতে পারে।
- অতিরিক্ত গ্রহণে পেটে ব্যথা হতে পারে হতে পারে।
- কিডনিতে পাথর হওয়ার প্রবণতা বাড়ায়।
উপসংহার
পার্সিমন ফল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিতে ভরপুর। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, ত্বকের গঠন সুন্দর করতে, ব্যাকটেরিয়ার হাত থেকে রক্ষা পেতে, হজম ক্রিয়া ঠিক রাখতে, ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে, হার্ট এবং চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে আপনি নিয়মিত পার্সিমন ফল খেতে পারেন। তবে আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
আজকের পার্সিমন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা আর্টিকেলে সবোর্চ্চ তথ্য দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। ধন্যবাদ মনোযোগ সহকারে পোস্টটি পড়ার জন্য।